• Skip to main content

Travel Way Info

Explore the world with trusted travel tips and info.

  • Bangladesh Travel
  • Barishal
  • Chittagong
  • Dhaka
  • Khulna
  • Sylhet
  • Mymensingh
মহাস্থানগড় ভ্রমণ গাইড- Mahasthangarh travel

মহাস্থানগড় ভ্রমণ গাইড- Mahasthangarh travel

posted on July 3, 2025

মহাস্থানগড় ভ্রমণ হলো এক অনন্য অভিজ্ঞতা যেখানে আপনি স্পর্শ করতে পারবেন প্রাচীন বাংলার সভ্যতা, সংস্কৃতি এবং ইতিহাসকে। এটি বাংলাদেশের প্রথম এবং অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান, যা আপনাকে নিয়ে যাবে প্রায় আড়াই হাজার বছরের পুরোনো এক নগরজীবনের ইতিহাসে। এখানকার প্রতিটি প্রাচীর, মাটি, মূর্তি আর ইট যেন বয়ে বেড়াচ্ছে এক জীবন্ত ইতিহাস।

মহাস্থানগড় ভ্রমণ বিস্তারিত তথ্য (Mahasthangarh travel Guide)

বাংলাদেশের বগুড়া জেলায়  অবস্থিত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যবাহী স্থান মহাস্থানগড়। এটি খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দীতে গড়ে ওঠা প্রাচীন পুন্ড্রবর্ধন নগরীর অবশেষ। এখানকার দুর্গ, টেরাকোটা শিল্প, ব্রাহ্মী লিপির শিলালিপি এবং প্রাচীন মন্দির ভ্রমণকারীদের ইতিহাসের গহ্বরে নিয়ে যায়। মহাস্থানগড়  শুধু ভ্রমণ নয়, এটি এক শিক্ষা, এক ঐতিহাসিক যাত্রা।

অবস্থান ও যোগাযোগ ব্যবস্থা (Mahasthangarh Location):

মহাস্থানগড় বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। এটি ঢাকা থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে এবং বগুড়া শহর থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার দূরে। মহাসড়ক ধরে ঢাকা থেকে বগুড়া পর্যন্ত এসি ও নন-এসি বাসে সহজেই পৌঁছানো যায়। বগুড়া শহর থেকে রিকশা, সিএনজি বা লোকাল বাসে সহজেই মহাস্থানগড় পৌঁছানো সম্ভব।

মহাস্থানগড়ের প্রাচীন ইতিহাস (Mahasthangarh History):

মহাস্থানগড় বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন নগরী হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দীতে মৌর্য সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং পরবর্তীতে গুপ্ত, পাল ও সেন রাজবংশের শাসনাধীন ছিল। ১৯৩১ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে এখানে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন শুরু হয়। এখানে পাওয়া যায় ব্রাহ্মী লিপি খচিত শিলালিপি, বিভিন্ন প্রাচীন মুদ্রা, পোড়ামাটির ভাস্কর্য, এবং বহু প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শন। এগুলো থেকে বোঝা যায়, মহাস্থানগড় ছিল এক উন্নত ও পূর্ণাঙ্গ নগর ব্যবস্থা।

জন্মস্থান ঘরের প্রকৃতি ও ধর্মীয় গুরুত্ব:

মহাস্থানগড় এলাকায় অবস্থিত একটি পবিত্র স্থান “জন্মস্থান ঘর” নামে পরিচিত। এটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত। ধারণা করা হয় এটি শ্রীকৃষ্ণের কোনও ভক্তের জন্মস্থান ছিল। এখানে প্রতিদিন পূজা-অর্চনা হয় এবং প্রতি বছর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এখানে তীর্থযাত্রা করেন। স্থানটির আশেপাশে রয়েছে ছায়া ঘেরা পরিবেশ ও শান্ত মনোরম প্রকৃতি।

দর্শনীয় স্থানসমূহ – (Tourist Place) :

মহাস্থানগড় ভ্রমণ করলে যে স্থানগুলো অবশ্যই দেখতে হবে:

  • গোকুল মেধ (বেহুলার বাসর ঘর): এটি একটি প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শন যা পাল যুগে নির্মিত হয়েছে। এটি একটি বৌদ্ধ স্তূপ বলে ধারণা করা হয়।
  • গোবিন্দ ভিটা: প্রাচীন হিন্দু মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ, যেখানে শ্রীগোবিন্দ দেবের পূজা হতো।
  • খোদার পাথর ভিটা: এখানে পাওয়া গেছে প্রাচীন টেরাকোটা শিল্পকর্ম এবং একটি মসজিদের ধ্বংসাবশেষ।
  • বাইবেল হিল: এটি একটি উঁচু স্থান, যেখান থেকে পুরো মহাস্থানগড় দেখা যায়।
  • জিয়ুত কুণ্ড: এটি একটি পবিত্র কুণ্ড বা কুয়া, যেখানে তীর্থযাত্রীরা পবিত্র স্নান করে।

ঢাকা থেকে কিভাবে যাবেন – (Dhaka To Mahasthangarh):

ঢাকার গাবতলী, কল্যাণপুর কিংবা সায়েদাবাদ থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন পরিবহনের বাস ছাড়ে। যেমন: এস আর, হানিফ, শ্যামলী, আগমনী, গ্রিন লাইন ইত্যাদি। বাসে ঢাকা থেকে বগুড়া যেতে ৫-৬ ঘণ্টা সময় লাগে। বগুড়া শহর থেকে সিএনজি বা অটোরিকশায় মাত্র ৩০-৪০ মিনিটে মহাস্থানগড় পৌঁছানো যায়। চাইলে ট্রেনেও যাওয়া যায়, সান্তাহার স্টেশনে নেমে সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে যাওয়া যায়।

কোথায় থাকবেন (Hotels In Mahasthangarh):

থাকার জন্য বগুড়া শহরে বিভিন্ন মানসম্মত হোটেল ও গেস্ট হাউস রয়েছে:

  • হোটেল মমইন: আধুনিক সুবিধা ও পরিবার নিয়ে থাকার জন্য আদর্শ।
  • নাজ গার্ডেন হোটেল: শহরের অন্যতম সেরা হোটেল, যেখানে উচ্চ মানের রুম ও খাবার পাওয়া যায়।
  • পার্ক মোটেল (BPC): সরকারি পর্যটন মোটেল, যারা বাজেট রেঞ্জে ভালো থাকা চান তাদের জন্য উপযুক্ত।

কি খাবেন বা স্থানীয় খাবার(Local Food)

ভ্রমণে বগুড়ার বিখ্যাত দই অবশ্যই খেতে ভুলবেন না। এছাড়া:

  • বগুড়ার গরুর মাংস: বিশেষ করে ভুনা মাংস স্থানীয়দের মাঝে খুব জনপ্রিয়।
  • দেশি মুরগি ও পান্তা-ইলিশ: গ্রামের হোটেলগুলিতে এই খাবার পাওয়া যায়।
  • লোকাল বাজারের খাবার: যেগুলোতে থাকে চটপটি, ফুচকা, দই-চিড়া ইত্যাদি।

ভ্রমণের সেরা সময় (Best Time to Visit):

ভ্রমণের জন্য অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত সময় সবচেয়ে উপযুক্ত। এ সময় আবহাওয়া শুষ্ক ও মনোরম থাকে। গ্রীষ্মে রোদ বেশি ও বর্ষায় কাদা হতে পারে, তাই এই সময় কিছুটা কষ্টসাধ্য। শীতকালেই দর্শনার্থীর চাপ বেশি থাকে।

ছবি তোলার সেরা স্থান (Best Photo Spots):

  • গোকুল মেধের ওপরে দাঁড়িয়ে প্রাচীন স্থাপনার পটভূমিতে ছবি তুলতে পারেন।
  • সূর্যাস্তের সময় করতোয়া নদীর পাড়ে চমৎকার ছবি পাওয়া যায়।
  • বাইবেল হিল থেকে পুরো এলাকা এক ফ্রেমে বন্দি করা যায়।

মহাস্থানগড় ভ্রমণের জন্য ভ্রমণ সূচি (Visit Order):

সকাল ৮:০০ — বগুড়া থেকে মহাস্থানগড় রওনা

বগুড়া শহর থেকে রিকশা বা সিএনজি নিয়ে মহাস্থানগড়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করুন।

সকাল ৮:৩০ — গোকুল মেধ দর্শন

মহাস্থানগড় পৌঁছে প্রথমে গোকুল মেধের প্রাচীন বৌদ্ধ স্তূপ ও স্থাপত্য দেখুন। এখানে কিছু সময় ব্যয় করে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন অনুধাবন করুন।

সকাল ৯:৩০ — গোবিন্দ ভিটা পরিদর্শন

গোকুল মেধ থেকে দূরে নয়, গোবিন্দ ভিটা মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ দেখতে পারেন এবং স্থানীয় ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারেন।

সকাল ১০:০০ — খোদার পাথর ভিটা

খোদার পাথর ভিটায় গিয়ে টেরাকোটা শিল্পকর্ম ও প্রাচীন মসজিদের ধ্বংসাবশেষ পর্যবেক্ষণ করুন।

সকাল ১১:০০ — জিয়ুত কুণ্ডে পবিত্র স্নান (ঐচ্ছিক)

ঐতিহাসিক জিয়ুত কুণ্ডে পবিত্র স্নান করুন বা আশেপাশের শান্ত পরিবেশে সময় কাটান।

দুপুর ১২:০০ — বাইবেল হিল থেকে মহাস্থানগড়ের দৃশ্য উপভোগ

বাইবেল হিলের চূড়ায় উঠে পুরো এলাকাটি প্যানোরামিকভাবে দেখুন ও ছবি তুলুন।

দুপুর ১:০০ — লাঞ্চ টাইম

বগুড়া শহরে ফিরে স্থানীয় কোনো হোটেলে বগুড়ার বিখ্যাত দই ও ভুনা মাংস সহ স্থানীয় খাবার উপভোগ করুন।

দুপুর ২:০০ — আশেপাশের অন্যান্য দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখুন (ঐচ্ছিক)

বগুড়া শহরে আরও কিছু স্থান দর্শনের ইচ্ছা থাকলে বিকালের জন্য পরিকল্পনা করুন।

বিকাল ৪:০০ — ঢাকা ফেরার জন্য যাত্রা শুরু

ঢাকার উদ্দেশ্যে বাস বা ট্রেন ধরে ফিরে যান।


 ভ্রমণের সতর্কতা

  • দুর্গ বা মন্দিরের প্রাচীন স্থাপনার উপর না ওঠা বাঞ্ছনীয়।
  • গাইড নিলে স্থানীয় তথ্য জানা সহজ হয়।
  • পর্যাপ্ত পানি ও হালকা খাবার সাথে রাখা ভালো।
  • গরমের সময় ছাতা, সানস্ক্রিন এবং সানগ্লাস ব্যবহার করুন।
  • ব্যক্তিগত মূল্যবান জিনিসপত্র সতর্কতার সাথে রাখুন।

উপসংহার

সব মিলিয়ে মহাস্থানগড় ভ্রমণ শুধু একটি ভ্রমণ নয়, এটি একটি ইতিহাসের সাথে জীবন্ত সাক্ষাৎ। এখানে এসে আপনি দেখতে পাবেন বাংলার প্রাচীন সভ্যতা, ধর্মীয় সংস্কৃতি, স্থাপত্য এবং লোকজ ইতিহাসের দুর্লভ নিদর্শন। যারা প্রকৃতি, ইতিহাস আর ভিন্ন অভিজ্ঞতার সন্ধানে আছেন, তাদের জন্য মহাস্থানগড় নিঃসন্দেহে একটি চমৎকার গন্তব্য। তাই সময় করে একদিন ঘুরে আসুন এই ঐতিহাসিক মহাস্থানগড় থেকে — যা আমাদের অতীতের গৌরবময় ইতিহাসের নীরব সাক্ষী।


জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন FAQ:

১. মহাস্থানগড় কোথায় অবস্থিত?
মহাস্থানগড় বাংলাদেশে বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত, বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে।

২. ঢাকা থেকে মহাস্থানগড় যেতে কত সময় লাগে?
ঢাকা থেকে বাসে প্রায় ৫-৬ ঘণ্টা সময় লাগে বগুড়া পর্যন্ত, এরপর বগুড়া থেকে সিএনজি বা রিকশায় ৩০-৪০ মিনিটে মহাস্থানগড় পৌঁছানো যায়।

৩. মহাস্থানগড়ের প্রধান আকর্ষণগুলো কি কি?
মহাস্থানগড়ে গোকুল মেধ, গোবিন্দ ভিটা, খোদার পাথর ভিটা, বাইবেল হিল, এবং জিয়ুত কুণ্ড অন্যতম দর্শনীয় স্থান।

৪. ভ্রমণের সেরা সময় কখন?
অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত সময় মহাস্থানগড়  সবচেয়ে উপযুক্ত ভ্রমণের জন্য , কারণ এ সময় আবহাওয়া শুষ্ক ও আরামদায়ক থাকে।

৫. মহাস্থানগড়ে কোথায় থাকবেন?
বগুড়া শহরে হোটেল মমইন, নাজ গার্ডেন হোটেল, পার্ক মোটেল (BPC) এর মতো মানসম্মত হোটেল রয়েছে।

৬. মহাস্থানগড়ে কি ধরনের খাবার পাওয়া যায়?
বগুড়ার বিখ্যাত দই, গরুর মাংসের ভুনা, দেশি মুরগি, পান্তা-ইলিশ, এবং স্থানীয় বাজারের চটপটি, ফুচকা জনপ্রিয়।

৭. মহাস্থানগড় কি ধরণের গাইড থাকা প্রয়োজন ভ্রমণের জন্য ?
একজন স্থানীয় গাইড ভ্রমণকে আরও তথ্যবহুল ও উপভোগ্য করে তোলে, বিশেষ করে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানের ইতিহাস জানতে।

৮. মহাস্থানগড়ে যাতায়াতের সুবিধা কেমন?
বগুড়া থেকে রিকশা, সিএনজি, লোকাল বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে মহাস্থানগড় যাওয়া সহজ।

৯. মহাস্থানগড়ে কোন সতর্কতা মেনে চলা উচিত?
প্রাচীন দুর্গ বা মন্দিরের উপর উঠা থেকে বিরত থাকতে হবে, ব্যক্তিগত জিনিসপত্র সতর্কতার সাথে রাখতে হবে এবং গরমে সানস্ক্রিন ও ছাতা ব্যবহার করা উচিত।

১০. মহাস্থানগড়ের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী?
মহাস্থানগড় খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দীর পুন্ড্রবর্ধন নগরীর অবশেষ, যা মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন শাসনাধীন ছিল এবং বাংলাদেশের প্রথম প্রাচীন নগরী হিসেবে খ্যাত।

➡️ আরও ভ্রমণ গাইড পড়ুন: বাংলাদেশের সেরা ১০টি ভ্রমণ স্থান – ২০২৫

Filed Under: Bangladesh Travel

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • About us
  • Contact Us
  • Privacy Policy
  • Terms & Conditions
  • Disclaimer

Copyright@2025 Protected by Travel Way Info

Go to mobile version