শ্রীমঙ্গল দর্শনীয় স্থান সমূহ সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থিত। এটি দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র যা তার মায়াবী প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, চা বাগান, বনভূমি ও বৈচিত্র্যময় জৈব বৈচিত্রের জন্য বিখ্যাত।শ্রীমঙ্গল বাংলাদেশের চা-কন্যার এক অপূর্ব ভ্রমণ গাঁথা।
শ্রীমঙ্গল দর্শনীয় স্থান সমূহ ও বিস্তারিত -Sreemangal Tourist Spot:
বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র হল শ্রীমঙ্গল। শ্রীমঙ্গলে বেশ কয়েকটি ভ্রমণ স্পট রয়েছে যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এবং ভ্রমণ প্রিয় মানুষের জন্য সেরা জায়গা।শ্রীমঙ্গলের সেরা দর্শনীয় স্থানসমূহ এবং দর্শনীয় স্থানগুলোর সকল তথ্য তুলে ধরা হলো,
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান – Lawachara National Park:
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। এটি একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান প্রায় ১২৫০ হেক্টর জায়গা নিয়ে বিস্তৃত, যা ১৯৯৭ সালে জাতীয় উদ্যান হিসেবে স্বীকৃতি পায়।এ বনে ৩০০ টিরও বেশি প্রজাতির পাখি ও লতা গুল্ম সহ নানা ধরনের বৃক্ষ এবং বিভিন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণীরয়েছে।ঘন সবুজ বন এবং পাহাড়ি পথ দর্শনার্থীদের মন কারে।
মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত – Madhabkunda Waterfall:
বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত অবস্থিত। মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত পাহাড় ও সবুজে ঘেরা বনাঞ্চলের মাঝে অবস্থিত, যা মনমুগ্ধকর দৃশ্য সৃষ্টি করে থাকে।এটি বর্ষাকালে সবচেয়ে বেশি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে এবং তখন পানি প্রবাহ বেশি থাকে ও প্রাকৃতিক দৃশ্য আরো আকর্ষণীয় করে তোলে।মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য আদর্শ একটি গন্তব্য। এটি শুধুমাত্র সৌন্দর্যের জন্য নয় পরিবেশগত গুরুত্বের জন্য মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতকে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
হাম হাম জলপ্রপাত – Ham ham Waterfall:
হাম জলপ্রপাত বাংলাদেশের সুন্দর ও অন্যতম অ্যাডভেঞ্চার প্রেমী পর্যটকদের জন্য আদর্শ একটি গন্তব্য। এই জলপ্রপাত প্রায় ১৪৭ ফুট উঁচু থেকে প্রবাহিত হয় যা এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য তৈরি করে থাকে। চারপাশ ঘেরা ঘন অরণ্য এবং পাহাড়ি পথ এর সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে তুলে। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র সংরক্ষণ করা হলে এটি দীর্ঘদিন ধরে পর্যটকদের জন্য সেরা একটি পর্যটন কেন্দ্র থাকবে
বড়লেখা চা বাগান – Tea Garden Sylhet:
বড়লেখা চা বাগান মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় অবস্থিত। বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন বিখ্যাত চা বাগান গুলোর মধ্যে একটি যা দেশের অর্থনীতিতে বিশেষভাবে ভূমিকা রাখে। বড়লেখা চা বাগানে উৎপাদিত চা সমূহ দেশের চাহিদা মিটিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারেও রপ্তানি করা হয়। এখানে আসলে পর্যটকরা চা পাতা সংগ্রহের এবং চা বাগানের প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে পারে। এটি বাংলাদেশের অন্যতম ও ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোর মধ্যে বিশেষ একটি স্থান।
বৈদ্যনাথ পাহাড় – Sylhet hill Tracts:
বৈদ্যনাথ পাহাড় প্রকৃতিপ্রেমী ও পর্যটকদের জন্য দারুন একটি পর্যটন স্থান যার প্রকৃতি প্রতিটি পর্যটকের ভ্রমণ তৃষ্ণা মেটায়। সবুজ বন, চা বাগান, পাহাড়ি অপূর্ব প্রকৃতি সমন্বয়ে গঠিত। বৈদ্যনাথ পাহাড় সিলেটের বড়লেখা উপজেলা অবস্থিত। এই পাহাড়ের উচ্চতা বেশি না হলেও এই পাহাড় থেকে চারপাশের দৃশ্য অসম্ভব সুন্দর লাগে। স্থানীয় লোককথা ও এর ঐতিহ্যের সাথে নাম জড়িত।
শ্রীমঙ্গলের বিখ্যাত খাবার – Sreemangal Famous Food:
- সাতরঙা চা
- শুটকি মাছের ভর্তা
- দেশি হাঁসের মাংস
- চিতই পিঠাও খেজুরের গুড় ইত্যাদি
একদিনের শ্রীমঙ্গল ভ্রমণ পরিকল্পনা – Sreemangal Day Tour :
সকাল:
- ভোরবেলা ট্রেনে বাসে শ্রীমঙ্গলে পৌঁছানো তারপর সকালের নাস্তা শেষে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান পরিদর্শন, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এর অন্যতম আকর্ষণ হল বানর উল্লুক ও বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী।
দুপুর:
- স্থানীয় কোন রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার শেষ করে চা বাগান পরিদর্শন। চা বাগান পরিদর্শনে সবুজের মাঝে ছবি তোলা ও চা পাতা সংগ্রহের অভিজ্ঞতা এবং চা বাগানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা।
বিকেল:
- শ্রীমঙ্গলে বিকেলে সময়টা আপনি হামহাম জলপ্রপাত বা মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত ভ্রমণ করতে পারেন। সেখানে কিছুটা সময় কাটিয়ে এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করে সাইকেল নিয়ে শ্রীমঙ্গল শহর ঘুরতে পারবেন।
সন্ধ্যা:
- শ্রীমঙ্গলের অন্যতম বিশেষ আকর্ষণ হলো সাতরঙা চা, সন্ধ্যার পর সাতরা চা চোখে দেখা এবং এর স্বাদ উপভোগ করা। এছাড়াও স্থানীয় হস্তশিল্প ও চা বাজার সংগ্রহ।
- শ্রীমঙ্গলের এই পর্যটন কেন্দ্রগুলো ঘোরা শেষ করে রাতে ট্রেন বা বাসে আবার আপনার গন্তব্য স্থানে ফিরে যাওয়া।
ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল – Dhaka to Srimangal:
ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন, মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার যে কোন ধরনের গাড়িতে সহজেই শ্রীমঙ্গল যাওয়া যায়। শ্রীমঙ্গলের অভ্যন্তরে ঘুরাঘুরি করার জন্য আপনি সিএনজি, অটো রিক্সা, মোটরসাইকেল ও বাই সাইকেল ব্যবহার করতে পারেন।
শ্রীমঙ্গলের সেরা ১০ টি রিসোর্ট, Sreemangal Resort:
শ্রীমঙ্গলে বিভিন্ন মানের হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে যেমন,
- গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট এন্ড গলফ (Grand Sultan Tea Resort & Golf).
- নভেম ইকো রিসোর্ট (Novem Eco Resort).
- তাজিংডং রিসোর্ট (Tajingdong Resort).
- শ্রীমঙ্গল টুরিস্ট মোটেল (Sreemangal Tourist Motel).
- গ্রীন লিফ গেস্ট হাউস (Green Leaf Guest House).
- ট্রপিকাল রেইন ফরেস্ট রিসোর্ট (Tropical Rain Forest Resort).
- আরণ্যক রিসোর্ট (Aranyak Resort).
- হিলভিউ রিসোর্ট (Hillview Resort).
- চায়ের দেশ রিসোর্ট (Tea Country Resort).
- নীলকুঠি রিসোর্ট (Neelkuthi Resort).
শ্রীমঙ্গল রিসোর্ট ও হোটেল ভাড়া (Sreemangal Hotel Price):
শ্রীমঙ্গলের কিছু হোটেল ও রিসোর্ট এর বিস্তারিত তুলে ধরা হলো,
রিসোর্টের নাম | প্যাকেজের নাম | রুম ভাড়া প্রতি রাত | |
কিং-ডিলাক্স – প্রেসিডেন্সিয়াল সুইট | ৩১,১০০ টাকা থেকে শুরু ১,১০,০০০ টাকা পর্যন্ত। | ||
| ফ্যামিলি সুইট – টি গার্ডেন কটেজ | ১,৩০০ টাকা থেকে শুরু ১৩,০০০ টাকা পর্যন্ত। | |
| কাপল ডিলাক্স- ফ্যামিলি ভিলা রুম | ৭,৯৯৯ টাকা থেকে শুরু ১১,৯৯৯ টাকা পর্যন্ত। | |
| বিভিন্ন রুম | ৪,৮০০ টাকা থেকে শুরু ১২,০০০ টাকা পর্যন্ত। | |
| ইকোনোমি- বাংলো | ৮,০০০ টাকা থেকে শুরু ১৭,০০০ টাকা পর্যন্ত। | |
| ডিলাক্স, সুপার ডিলাক্স, এক্সিকিউটিভ রুম। | ৭,০০০ টাকা থেকে শুরু ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত। | |
| এক্সিকিউটিভ- কাপল ডিলাক্স | ২,০০০ টাকা থেকে শুরু ৫,৫০০ টাকা পর্যন্ত। | |
| বিভিন্ন ক্যাটাগরি | ২,০০০ টাকা থেকে শুরু ৪৫,০০ টাকা পর্যন্ত। | |
| বিভিন্ন ক্যাটাগরি | ৪,২০০ টাকা থেকে শুরু ৫,৮০০ টাকা পর্যন্ত। | |
| বিভিন্ন লাক্সারি রুম | ৫,৮০০ টাকা থেকে শুরু ১৪,০০০ টাকা পর্যন্ত। |
শ্রীমঙ্গল ভ্রমণের উপযুক্ত সময় – Best time to visit Sreemangal:
শ্রীমঙ্গল ভ্রমণের জন্য শীতকাল ( নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি) মাস সেরা একটি সময়, কারণ এই সময়ে আবহাওয়া অসম্ভব সুন্দর থাকে এবং চা বাগানের সবুজ সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
শ্রীমঙ্গলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা:
শ্রীমঙ্গল পর্যটকদের জন্য অত্যন্ত নিরাপদ একটি স্থান।স্থানীয় টুরিস্ট পুলিশ ও প্রশাসন সার্বক্ষণিক নজরদারি করে থাকে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য তারা সবসময় টহল দিয়ে থাকে।
শ্রীমঙ্গল ভ্রমণের সময় আপনার নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করতে নিচের বিষয়গুলোতে সতর্কতা অবলম্বন করুন:
রেললাইন পারাপার:
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে রেললাইন অতিক্রম করার সময় বিশেষ সতর্ক থাকুন। চলন্ত ট্রেনের সময়সূচি সম্পর্কে অবগত থাকুন এবং রেললাইন পার হওয়ার সময় দুই দিক ভালোভাবে দেখে নিন।
প্রাকৃতিক পরিবেশে চলাচল:
লাসুবন গিরিখাত বা হামহাম জলপ্রপাতের মতো দুর্গম স্থানে ভ্রমণের সময় সতর্ক থাকুন। পিচ্ছিল পাথর, খাড়া পাহাড়ি পথ এবং হঠাৎ বৃষ্টির ফলে সৃষ্ট ঢলের সম্ভাবনা রয়েছে। স্থানীয় গাইডের সহায়তা নিন এবং আবহাওয়া সম্পর্কে পূর্বাভাস জেনে নিন।
পর্যটনকেন্দ্রের নিয়ম মেনে চলা:
প্রতিটি পর্যটনকেন্দ্রের নিজস্ব নিয়মাবলী রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বাইক্কা বিলে মাছ ধরা নিষিদ্ধ। এসব নিয়ম মেনে চলুন এবং পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করুন।
স্থানীয় সংস্কৃতি ও সম্প্রদায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন:
খাসিয়া পুঞ্জি বা মনিপুরী গ্রামের মতো স্থানীয় সম্প্রদায়ের এলাকায় ভ্রমণের সময় তাদের সংস্কৃতি ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন। অনুমতি ছাড়া তাদের ছবি তোলা বা বাড়িতে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকুন।
পর্যটনকেন্দ্রের অবস্থা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ:
ভ্রমণের আগে সর্বশেষ তথ্য সংগ্রহ করুন। উদাহরণস্বরূপ, কিছু সময়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে ভ্রমণ সীমিত থাকতে পারে।
পরিবহন ও আবাসনের নিরাপত্তা:
পরিবহন ও আবাসন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত ও পরিচিত সেবা প্রদানকারীদের বেছে নিন। স্থানীয় সুপারিশ বা বিশ্বস্ত সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সিদ্ধান্ত নিন।
- শ্রীমঙ্গল দর্শনীয় স্থান সমূহ তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের জন্য পরিচিত। সঠিক প্রস্তুতি ও সতর্কতার মাধ্যমে আপনার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা আরও আনন্দময় ও নিরাপদ হবে।
Leave a Reply