সাজেক ভ্যালি ” Sajek Valley ” কে বাংলাদেশের মেঘের রাজ্য বলা হয়। সাজেক ভ্যালি বাংলাদেশের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র যা প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য স্বর্গরাজ্যের মত। চারদিকে মেঘে ঘেরা এই পর্যটন কেন্দ্রটি তার চোখ জুড়ানো সৌন্দর্যে, পাহাড়ি পথ, আদিবাসীদের সংস্কৃতি ও তার নির্জনতার জন্য ভ্রমণ পিপাসুদের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র। যারা সাজেক ভ্যালিতে একবার ঘুরতে আসে তারা বারবার ফিরে আসতে চাই সাজেকের প্রকৃতির গভীর অরণ্যে।
সাজেক ভ্যালির ইতিহাস -Sajek Valley Details :
পার্শ্ববর্তী নদী সাজেক নদীর নাম অনুসারে সাজেক নামকরণ করা হয়েছে, যা বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তবর্তী অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে চলমান। সাজেক “Sajek Valley” রাঙ্গামাটি জেলার অন্তর্গত হলেও সাজেক যাওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা হয়ে যেতে হবে। মূলত আদিবাসীদের বসবাসের একটি অঞ্চল হল সাজেক। সাজেক এ পাংখো, ত্রিপুরা, মারমা এবং চাকমা সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠী বসবাস করে। সাজেকের অন্যতম এবং প্রদান দুটি গ্রাম হল কংলাক পাড়া এবং রুইলুই পাড়া।
প্রাকৃতিক পরিবেশ –Beauty of Sajek :
সাজেকের চারপাশ পাহাড় বন এবং মেঘে ঘেরা এক অপূর্ব সৌন্দর্যের প্রতিচ্ছবি।সাজেক ভ্যালির প্রধান এবং অন্যতম আকর্ষণ হল পাহাড়ি গ্রাম, আদিবাসীদের সংস্কৃতি, প্রাকৃতিক ঝর্ণা, রোমাঞ্চকর ট্রেকিং ইত্যাদি। সাজেক এ ঘুরতে আসা পর্যটকরা সাজেকের অপূর্ব সৌন্দর্যে ভ্রমণ তৃষ্ণা মেটাই।এখানে সব সময় বাতাস এবং অনেক ঠান্ডা একটি পরিবেশ বিরাজ করে। সবুজ প্রকৃতি, মেঘের রাজ্য, এবং মনোমুগ্ধকর দৃশ্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে।
সাজেক এর আয়তন –Area of Sajek:
সাজেকের আয়তন আনুমানিক প্রায় ৭০৮ বর্গ কিলোমিটার । এটি পার্বত্য অঞ্চলগুলো ঘিরে বিস্তৃত যা ভ্রমণ পিপাসুদের ভ্রমণে পরিপূর্ণ তৃপ্তি যোগায়।
সাজেক ভ্যালির অবস্থান –Sajek Location:
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় সাজেক অবস্থিত। সাজেক খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সাজেক সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উচ্চতম পর্যটন কেন্দ্র।
সাজেক ভ্যালির দর্শনীয় স্থানসমূহ – Sajek Valley Tourist Spots :
সাজেক ভ্যালিতে পর্যটকদের ভ্রমণের অনেকগুলো সুন্দর স্থান রয়েছে যেমন:
- কংলাক পাহাড়
- রুই লুই পাহাড়
- কামালিয়া ঝর্ণা
- হাঙ্গর ঝর্ণা
- সাজেক হিল রিসোর্ট
- লুসাই পাহাড়
উপরুক্ত দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থানগুলো হল হাঙর ঝর্ণা, সাজেক রিসোর্ট এবং রুইলুই পাহাড়।
সাজেক ভ্যালিরস্থানীয় খাবার – Sajek’s local Food :
সাজেক ভ্যালিতে বেশ কিছু খাবার পাওয়া যায় যেমন বাসভাত, পাহাড়ি মুরগির ঝোল, আদিবাসীদের বিশেষ খাবার, দেশি মধু,পাহাড়ি ফলমূল ইত্যাদি। সাজেক ভ্রমণে পর্যটকরা এই স্থানীয় খাবার গুলো খেয়ে থাকে এবং এই খাবারের স্বাদ সত্যিই প্রশংসনীয়।
ভ্রমণে যা দেখতে পারবেন – Sajek Tour :
Sajek Valleyভ্রমণে আপনি দেখতে পারবেন আদিবাসীদের সংস্কৃতি ,দেখতে পারবেন পাহাড়ি আদিবাসীদের গ্রামের জীবনধারা। মেঘের সাথে তাল মিলিয়ে কুয়াশা ভরা সকাল আপনাকে মনমুগ্ধকর করবে। সাজেকের অন্যতম আকর্ষণ হলো সূর্যদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করা।
সাজেক কিভাবে যাব ?- Dhaka to Sajek :
আপনি যদি ঢাকা থেকে সাজেক যেতে চান তবে প্রথমে আপনাকে খাগড়াছড়ি বা রাঙ্গামাটি যেতে হবে, তারপর সেখান থেকে খাগড়াছড়ির বিশেষ বাহন চান্দের গাড়ি করে সাজেক পৌঁছাতে পারবেন।
চান্দের গাড়ি সম্পর্কে বিস্তারিত – Chander gari Sajek
সাজেকের পাহাড়ি উঁচু-নিচু পথে ভ্রমণের জন্য জনপ্রিয় যানবাহন “চান্দের গাড়ি”।চান্দের গাড়ি মূলত উঁচু চাকা বিশিষ্ট একটি জীব যা উঁচু-নিচু পাহাড়ি পথে যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছায়। চান্দের গাড়ি সাধারণত খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালা ⇒ বাঘাই হাট হয়ে সাজেক রুটে চলাচল করে। চান্দের গাড়িতে অ্যাডভেঞ্চারস যাত্রায এবং মেঘ ছোঁয়ার অন্যরকম এক অনুভূতি পাওয়া যায়।
সাজেক ভ্যালির জনপ্রিয় রিসোর্ট ও ভাড়া বিস্তারিত – Sajek Hotel Price :
সাজেকে বেশ কিছু উন্নত মানের আকর্ষণীয় হোটেল এবং রিসোর্ট রয়েছে, যে হোটেল গুলো থেকে পাখির মত করে মেঘের সমুদ্র উপভোগ করা যায়।
কিছু জনপ্রিয় হোটেলের নাম:
- সাজেক রিসোর্ট – সাজেকের অন্যতম এবং জনপ্রিয় একটি রিসোর্ট হলো সাজেক রিসোর্ট।
- রুন্না রিসোর্ট – রুন্না রিসোর্টে আপনি পাবেন চমৎকার ভিউ এবং আধুনিক সুযোগ সুবিধা।
- কংলাক ইকো রিসোর্ট – এই রিসোর্টে আপনি পাহাড়ের চূড়ায় থাকার সুযোগ পাবেন এবং খুব কাছ থেকে পাহাড়কে উপভোগ করতে পারবেন।
- মেঘ পুঞ্জি রিসোর্ট- এখানে আপনি কম খরচের মধ্যে থাকতে পারবেন এবং তাদের সুযোগ সুবিধা গুলো মানসম্মত রয়েছে
- লুসাই কটেজ- আদিবাসী সংস্কৃতি উপভোগের অন্যতম এবং উপযুক্ত একটি কটেজ।
এছাড়া আরো অনেক হোটেল এবং রিসোর্ট রয়েছে।সাজেক হোটেল ভাড়া সাধারণত ১৫০০-১০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। তবে রিসোর্ট বা হোটেলে থাকা এবং ভাড়া নির্ভর করে পর্যটকদের চাহিদা এবং বাজেটের উপর। ভ্রমণের সিজনের উপর নির্ভর করে ভাড়া কমে এবং বাড়ে।
হোটেল বুকিং- Sajek Room Booking :
সাজেক আসার আগে অবশ্যই হোটেল ও রিসোর্টের বিস্তারিত তথ্য জানা উচিত, এবং আপনার চাহিদা অনুযায়ী হোটেল বুকিং করে রাখা উচিত। অনেক সময় পর্যটকদের ভিড় থাকায় ভালো মানের হোটেলগুলোতে জায়গা পাওয়া যায় না, পর্যটকদের উচিত এখানে আসার আগে অবশ্যই হোটেল বুকিং দিয়ে আসা।
শেষ কথা:
সাজেক ভ্যালি শুধুমাত্র একটি পর্যটনকেন্দ্র নয়, এটি প্রকৃতির এক অপূর্ব সৌন্দর্য। যারা প্রকৃতির মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে চান, মেঘের স্বর্গে সময় কাটাতে চান তাদের জন্য সাজেক হতে পারে একটি সঠিক গন্তব্য। আপনার সময় অনুযায়ী পরিকল্পনা করে একটি সুন্দর ভ্রমণ উপভোগ করুন এবং সৌন্দর্যের জগতে হারিয়ে যান।
Leave a Reply