সেন্টমার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে অবস্থিত সেন্টমার্টিন ।নীল জলরাশি, সাদা বালির সৈকত ও প্রবাল প্রাচীন এই দ্বীপকে অসম্ভব সুন্দর করে তুলেছে। প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকদের জন্য সেন্টমার্টিন একটি সেরা এবং অন্যতম গন্তব্য।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ এর পরিচিতি ও ইতিহাস – Saint Martin’s island Bangladesh:
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ইতিহাস শত শত বছর পুরনো এবং প্রাচীন। স্থানীয়ভাবে এটি নারিকেল জিনজিরা নামে খুব বেশি পরিচিত এর অন্যতম কারণ হলো এখানে প্রচুর পরিমাণে নারিকেল গাছ রয়েছে। জানা যায় কোন এক সময় আরব বণিকরা এই দ্বীপে আসতেন এবং এই দ্বীপটি নৌ-বানিজ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল।
সেন্টমার্টিনের প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র – Saint Martin’s island:
সেন্ট মার্টিনে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, এই দ্বীপে রয়েছে কাছিম, ডলফিন এবং বিভিন্ন সামুদ্রিক উদ্ভিদ। এই দ্বীপের প্রকৃতি মনোমুগ্ধকর যা পর্যটকদের মুগ্ধ করে তোলে। সেন্ট মার্টিনের স্বচ্ছ জলরাশি এবং বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক উদ্ভিদ পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ।
সেন্টমার্টিনের অবস্থান – Map of Saint Martin:
সেন্টমার্টিন কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার দক্ষিণ অঞ্চলে অবস্থিত। মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে এবং মিয়ানমারের সীমান্তের কাছাকাছি এই সেন্টমার্টিন দ্বীপের অবস্থান।
সেন্টমার্টিনের আয়তন – Area of Saint Martin:
এই দ্বীপটির মোট আয়তন প্রায় ৮(আট) বর্গ কিলোমিটার তবে জোয়ারের সময়ের আয়তন অনেকটা কমে আসে।
ঢাকা থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার মাধ্যম – Dhaka To Sant Martin:
ঢাকা থেকে কক্সবাজার বা টেকনাফ পর্যন্ত বাসে যেতে হয়। এরপর টেকনাফ থেকে জাহাজ বা ট্রলারে সেন্টমার্টিন পৌঁছানো যায়।
টেকনাফ থেকে নৌপথে: টেকনাফ থেকে প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে দশটার মধ্যে জাহাজ ছাড়ে, যেমন কেয়ারী সিন্দবাদ, এম ভি ফারহান ইত্যাদি। এই জাহাজ গুলাই টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন। তবে যাওয়ার আগে অবশ্যই জাহাজের সময়সূচী জেনে নিবেন।
সেন্টমার্টিন দর্শনীয় স্থান সমূহ, – Best Places in Saint Martin:
⇒ ছেঁড়া দ্বীপ Chera dip Saint Martin:
ছেঁড়া দ্বীপ মূলত মূলদ্বীপের উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত এবং এখানে সমুদ্রের স্বচ্ছ জলরাশি দেখা যায়।ছেঁড়া দ্বীপ মূলত একটি বিচ্ছিন্ন প্রবাল দ্বীপ যেখানে পর্যটকরা খুব বেশি একটা যায় না, তাই ছেঁড়া দ্বীপের শান্ত পরিবেশ উপভোগ করা যায়। এই দ্বীপের প্রবাল রীফ গুলো অসম্ভব সুন্দর। ছেড়া দ্বীপে রাতে ক্যাম্পিং করার ব্যবস্থা রয়েছে যা পর্যটকদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা হতে পারে।
⇒ যাওয়ার মাধ্যম – Saint Martin to Chera dip
সেন্টমার্টিন মূল দ্বীপ থেকে স্পিডবোট বা নৌকায় মাত্র ৩০থেকে ৪০মিনিটের মধ্যে ছেঁড়া দ্বীপ যাওয়া যায়। তবে জুয়ার -ভাটার ওপর নির্ভর করে যাত্রার সময় কম বা বেশি হয়ে থাকে।
⇒ নারিকেল জিঞ্জিরা সৈকত – Narikel jinjira Sea Beach:
দ্বীপের প্রধান এবং অন্যতম সৈকত হলো নারিকেল জিঞ্জিরা সৈকত।এখানে প্রবালের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এটি সেন্ট মার্টিন দ্বীপের সবচেয়ে দীর্ঘ সৈকত।এখানকার স্বচ্ছ ও বালুকাময় তীরে হাঁটলে এক অপূর্ব অনুভূতি পাওয়া যায়। নারিকেল জিঞ্জিরা সৈকতের জোয়ার-ভাটার সময় সূচি সম্পর্কে জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ ভাটার সময় সৈকতের রূপ আরো মনমুগ্ধকর হয়ে ওঠে।
⇒ যাওয়ার উপায় – Saint Martin to Narikel jinjira Sea Beach
নারিকেল জিঞ্জিরা সৈকতে যাওয়ার জন্য সেন্টমার্টিন মূল দ্বীপ হতে দ্বীপের যেকোন প্রান্ত থেকে হেঁটে বা সাইকেলের সহজে পৌঁছানো যায়। নারিকেল জিঞ্জিরা সৈকত সেন্ট মার্টিনের কাছেই অবস্থিত।
⇒ সানসেট পয়েন্ট Sunset Point in St. Martin:
সানসেট পয়েন্ট সূর্যাস্তের চোখ জুড়ানো দৃশ্য উপভোগ এর জন্য উপযুক্ত একটি স্থান। সন্ধ্যার সময় এখানে বসে সাগরের ঢেউয়েরে শব্দ শুনতে শুনতে সূর্যাস্ত দেখার অনুভূতি অন্যরকম। সানসেট পয়েন্ট ফটোগ্রাফির জন্য আদর্শ একটি পরিবেশ, বিশেষ করে সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে সানসেট পয়েন্টের প্রকৃতি আপনাকে মনমুগ্ধকর করে তুলবে।
⇒ সানসেট পয়েন্ট যাওয়ার উপায় – St. Martin to Sunset Point:
সানসেট পয়েন্ট মূল দ্বীপের পশ্চিম দিকে অবস্থিত। পর্যটকরা সাধারণত বিকেলে সাইকেলে বা পায়ে হেঁটে সানসেট পয়েন্টে যায়।
⇒ সামুদ্রিক জীবন ও প্রবাল রীফ – Probal Dip Saint Martin:
এখানে পাওয়া যায় নানা ধরনের সামুদ্রিক প্রাণী ও রঙিন প্রবল রীফ।স্কোবার ড্রাইভিং এর মাধ্যমে এখানে সামুদ্রিক কচ্ছপ, নানা রঙের মাছ এবং বিভিন্ন ধরনের শামুক দেখা যায় । প্রবাল রীফ সংরক্ষণে কোন প্রবাল ছোঁয়া বা উঠিয়ে নেওয়া নিষিদ্ধ।
⇒ যাওয়ার উপায়
সামুদ্রিক জীবন ও প্রবাল রীফ স্কুবা ড্রাইভিং এর জন্য স্থানীয় ড্রাইভিং সেন্টার থেকে গাইডসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ভাড়া নেওয়া যায়।
সেন্ট মার্টিনের হোটেল সমূহ ও ভাড়া – Saint Martin Hotels & Resort Price:
সেন্টমার্টিন বিভিন্ন মানের হোটেল এবং রিসোর্ট হয়েছে, জনপ্রিয় হোটেল গুলোর মধ্যে রয়েছে:
হোটেল/রিসোর্ট | ভাড়া (প্রতি রাত) |
---|---|
ব্লু মারিন রিসোর্ট | ৩,০০০ – ৮,০০০ টাকা |
সাইনবোর্ড রিসোর্ট | ২,০০০ – ৫,০০০ টাকা |
প্রবাল রিসোর্ট | ১,৫০০ – ৪,০০০ টাকা |
মুন রিসোর্ট | ২,০০০ – ৫,০০০ টাকা |
নিরাপত্তা ও সতর্কতা:
- সেন্টমার্টিন দ্বীপ আসলে রাতের বেলা দ্বীপে চলাফেরা করার সময় সতর্ক থাকতে হবে।
- প্রবাল রিপ সংরক্ষণের জন্য ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকতে হবে।
- বর্ষাকালে সমুদ্র খুব বেশি উত্তাল থাকে তাই সে সময় ভ্রমণ না করাই ভালো।
- ভ্রমণের সময় প্রয়োজনীয় খাবারও বিশুদ্ধ পানির সঙ্গে রাখা উচিত।
- টেকনাফ থেকে নৌ পথে যাওয়ার আগে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে নেওয়া উচিত।
- দেশের যেকোনো প্রান্তে হোটেল বুকিং এর জন্য আমাদের Travel Way Infoতে, যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা আপনাকে আপনার চাহিদা অনুযায়ী হোটেল খুঁজে দিতে প্রস্তুত। আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে admin@travelwayinfo.com এই ঠিকানায় আপনার মন্তব্য লিখে পাঠান।
Leave a Reply