বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শেরপুর জেলায় অবস্থিত মধুটিলা ইকোপার্ক একটি অপূর্ব প্রাকৃতিক পর্যটন কেন্দ্র। যারা শহরের কোলাহল থেকে বেরিয়ে একটু শান্তি ও প্রকৃতির ছোঁয়া পেতে চান, তাদের জন্য মধুটিলা ইকোপার্ক ভ্রমণ হতে পারে দারুণ এক সিদ্ধান্ত।
মধুটিলা ইকোপার্ক ভ্রমণ কেন বিশেষ জনপ্রিয়?
মধুটিলা ইকোপার্ক ২০০৬ সালে বন বিভাগের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রাকৃতিক পাহাড়, সবুজ গাছপালা, বিভিন্ন বন্যপ্রাণী, আর পাহাড়ি ঝর্ণার গুঞ্জনে গড়ে উঠেছে এই পরিবেশবান্ধব ইকোপার্কটি। এর অবস্থান শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলায়, ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষা এলাকায়।
দূরত্ব ও যাতায়াত তথ্য
- ঢাকা থেকে মধুটিলা ইকোপার্কের দূরত্ব: প্রায় ১৯০ কিলোমিটার
- শেরপুর শহর থেকে দূরত্ব: প্রায় ২০ কিলোমিটার
💰 মধুটিলা ইকোপার্ক ভ্রমণ খরচ (প্রতি ব্যক্তি আনুমানিক):
খরচের খাত | আনুমানিক খরচ (BDT) |
ঢাকা → শেরপুর (বাস) | ৪০০–৫০০ টাকা |
শেরপুর → মধুটিলা (CNG/অটো) | ৫০–৭০ টাকা |
পার্ক প্রবেশ ফি | ৩০ টাকা |
খাবার (লোকাল হোটেল) | ১০০–২০০ টাকা |
মোট আনুমানিক খরচ | ১৫০০–২০০০ টাকা |
📌 গাইড বা দলবদ্ধ পিকনিক হলে কিছু খরচ ভাগ করে নেওয়া সম্ভব।
মধুটিলা ইকোপার্ক ভ্রমণ কীভাবে করবেন?
ঢাকা থেকে যাতায়াত:
ঢাকা থেকে শেরপুরের যাতায়াতের জন্য অনেক বাস সার্ভিস রয়েছে। আপনি সহজেই বাসে করে শেরপুরে যেতে পারবেন। মহাখালী বা গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে শেরপুরগামী বাসে উঠুন। এরপর শেরপুর শহর থেকে সিএনজি বা লোকাল গাড়িতে সরাসরি মধুটিলায় যাওয়া যায়।
মধুটিলা ইকোপার্ক ভ্রমণ অভিজ্ঞতায় যা দেখবেন-
- সবুজে ঘেরা পাহাড় ও বনভূমি
- ছোট ঝরনা ও পাহাড়ি স্রোত
- বানর, পাখি, হরিণসহ বন্যপ্রাণী
- ওয়াচ টাওয়ার থেকে অসাধারণ দৃশ্যপট
- পিকনিকের জন্য আলাদা ব্যবস্থা
🛏️ থাকার ব্যবস্থা ও খাবার-
মধুটিলা পার্কের কাছে থাকার খুব ভালো একটা ব্যবস্থা নেই, তাই আপনাকে আপনার নিরাপত্তার জন্য শেরপুর মূল শহরে থাকতে হবে।
হোটেল (শেরপুর শহরে):
- Hotel Laboni
- Hotel Star Inn
- Circuit House (অগ্রিম অনুমতি প্রয়োজন)
খাবার:
- শহরের লোকাল হোটেল বা রেস্টুরেন্ট
- সহজে দেশীয় খাবার পাওয়া যায়
মধুটিলা পার্কের পার্শ্ববর্তী দর্শনীয় স্থানসমূহ-
১. গারো পাহাড় ও আদিবাসী গ্রাম:
মধুটিলা ইকোপার্কের কাছাকাছি গারো পাহাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকা রয়েছে, যা প্রকৃতিপ্রেমী এবং ঐতিহ্যবোধী পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয়। এখানে গারো আদিবাসীদের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য অনুভব করা যায়।
২. ভেলুয়া সীমান্ত (বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত):
মধুটিলা ইকোপার্ক থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ভেলুয়া সীমান্ত বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় সীমান্ত এলাকা। এখানে দাঁড়িয়ে ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
৩. ঝিনাইগাতী বাজার:
ঝিনাইগাতী বাজার, মধুটিলা ইকোপার্কের প্রবেশপথ থেকে মাত্র ৫-৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি স্থানীয় হস্তশিল্প, আদিবাসী পণ্য এবং মুখরোচক খাবারের জন্য বিখ্যাত।
৪. মৌচাক পিকনিক স্পট:
মধুটিলা বনাঞ্চলের ভেতরে অবস্থিত মৌচাক পিকনিক স্পট একদম শান্ত পরিবেশে প্রকৃতির মাঝে পিকনিক করার জন্য আদর্শ স্থান। এটি ইকোপার্ক থেকে কিছুটা দূরে হলেও এখানে প্রকৃতিপ্রেমী মানুষদের জন্য এটি একটি জনপ্রিয় স্থান।
৫. ভিতরকুঠি ও পানগর পিকনিক স্পট:
ঝিনাইগাতী উপজেলার গ্রামীণ পরিবেশে অবস্থিত ভিতরকুঠি ও পানগর পিকনিক স্পট প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য একটি চমৎকার স্থান। এই জায়গাগুলো শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দিনযাপন করার জন্য উপযুক্ত।
৬. কংস নদী (Kongsha River):
শেরপুর জেলার অন্যতম নদী কংস নদী মধুটিলা ইকোপার্কের পাশ দিয়েই প্রবাহিত। এই নদীটি নৌকা ভ্রমণের জন্য খুব জনপ্রিয়। এখানকার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকরা নদীতে নৌকা ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন।
মধুটিলা ভ্রমণের সেরা সময় কখন?
মধুটিলা ভ্রমণের জন্য বছরের সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হল শীতকাল, অর্থাৎ নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত। এই সময়ে আবহাওয়া থাকে শুষ্ক ও আরামদায়ক, যা পাহাড়ি প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ এবং পরিবার বা বন্ধুদের সাথে ঘুরে বেড়ানোর জন্য একেবারে উপযুক্ত। গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুমেও ইকোপার্কে প্রকৃতির অনন্য রূপ দেখা যায়। বর্ষাকালে চারপাশে সবুজের ছোঁয়া আরও গভীর হয়, তবে অতিরিক্ত বৃষ্টি ও কাদা ভ্রমণে কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
⭐ ব্যক্তিগত রিভিউ: মধুটিলা ভ্রমণ এক কথায় অসাধারণ!
পাখির ডাক, বাতাসে গাছের দোল এবং পাহাড়ি রাস্তার অ্যাডভেঞ্চার সবকিছু মিলিয়ে এটি একটি পারফেক্ট ট্রিপ!
✅ উপসংহার:
সব মিলিয়ে বলা যায়, মধুটিলা ইকোপার্ক ভ্রমণ প্রকৃতিপ্রেমী এবং অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় ভ্রমণকারীদের জন্য এক নিখুঁত অভিজ্ঞতা। কম খরচে পাহাড়, বন ও বন্যপ্রাণীর স্বাদ নিতে চাইলে এই জায়গা হতে পারে আপনার পরবর্তী গন্তব্য।
Travel Way Info
আমরা সবসময় চায় আপনাকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য পৌঁছে দিতে। মধুটিলা ইকোপার্ক শুধু একটি স্থান নয়, এটি প্রকৃতির কোলে হারিয়ে যাওয়ার এক সুবর্ণ সুযোগ। আরও এমন ভ্রমণ গন্তব্য জানতে ও অনুপ্রেরণামূলক ভ্রমণ পরিকল্পনা পেতে নিয়মিত ভিজিট করুন 👉 travelwayinfo.com
Leave a Reply