পৃথিবীর দীর্ঘতম অখন্ডিত সমুদ্র সৈকত হিসেবে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পরিচিত। ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সৈকত টি বালুকাময়, যেখানে কাদা পাওয়া যায় না। বালিয়াড়ি সংলগ্ন এই সৈকতে শামুক-ঝিনুক এবং বিভিন্ন প্রজাতির প্রবালের বিপণি, আধুনিক হোটেল, কটেজ, এবং বর্ণিল বার্মিজ মার্কেট পর্যটকদের মনোরঞ্জন করে। কক্সবাজারের গুরুত্বপূর্ণ কিছু পর্যটন কেন্দ্র ও বিস্তারিত তুলে ধরা হলো:
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত – Cox’s Bazar Sea Beach:
কক্সবাজার সৈকত বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলায় অবস্থিত। এই সমুদ্র সৈকত টি ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ যা পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। ১৬১৬ সালের আগ পর্যন্ত চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সহ আরাকান রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। হিরাম কক্স নামে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক অফিসারের নাম থেকে কক্সবাজার নামটি এসেছে। কক্সবাজারে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী বসবাস করে যা এই শহরটিকে আরো বৈচিত্র্যময় করে তুলেছে। বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে চাকমা সম্প্রদায় অন্যতম ও প্রধান উপজাতি।
বৈচিত্র্যময় পরিবেশ – Cox’s Bazar Weather:
কক্সবাজার সমুদ্র প্রতিদিন নতুন রূপ ধারণ করে। সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা ও রাতের বেলার আবহাওয়া ভিন্ন। পর্যটকরা এখানে আসে সৌন্দর্য উপভোগ করতে এবং বিশুদ্ধ বাতাস গ্রহণ করতে। সী-বীচে ওপেন কনসার্ট, বীচ ফুটবল, ভলিবল, ক্রিকেট প্রতিযোগিতা ইত্যাদি আয়োজন করা হয়।
⇒ কক্সবাজার যেভাবে যাবেন – Dhaka To Cox’s Bazar:
ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার যেতে চাইলে কক্সবাজার হয়ে চট্টগ্রাম অথবা সরাসরি বাসে কক্সবাজার যেতে পারেন। ঢাকার আরামবাগ, ফকিরাপুল মতিঝিল সহ বেশ কয়েকটি জায়গা থেকে সরাসরি কক্সবাজারের বাস রয়েছে। এছাড়াও ঢাকা থেকে ট্রেনে চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের সরাসরি যেতে পারবেন ।তবে ট্রেনে যাওয়ার জন্য অবশ্যই আপনাকে টিকিট আগে কেটে রাখতে হবে।
⇒ কক্সবাজার থাকার ব্যবস্থা ও হোটেল ভাড়া – Cox’s Bazar Hotel & Cox’s Bazar Resort:
কক্সবাজারের সর্বনিম্ন ২০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ অর্ধ লক্ষ টাকা পর্যন্ত উন্নত মানের হোটেল রয়েছে। আপনার হোটেলে থাকা নির্ভর করবে আপনার বাজেটের উপর। আপনি আপনার বাজেটের মধ্যে হোটেল পেয়ে যাবে। আপনি চাইলে আগে থেকেই হোটেল বুকিং দিয়ে রাখতে পারেন অথবা সেখানে গিয়ে রুম দেখেও হোটেল রুম নিতে পারেন।
লাবনী বীচ – Laboni Beach:
কক্সবাজার ভ্রমণের শুরু করতে পারেন লাবনী বীচ থেকে কেননা লাবনী পয়েন্ট থেকে হেঁটে হেঁটে পূর্ব দিকে সোজা হিমছড়ি দিকে চলে যেতে পারবেন। লাবনী বিচ কক্সবাজার শহরের খুব কাছে অবস্থিত হওয়ায় অল্প সময়েই এই বীচে যেতে পারবেন। এই বীচে খুব সকালে ঘুরতে গেলে দেখতে পারবেন জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য ও সারি সারি নৌকা। সকালের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। মায়াবী এই সমুদ্র সৈকত প্রতিটি মুহূর্তে নতুন নতুন প্রকৃতি উপহার দেবে।
ইনানী সমুদ্র সৈকত – Inani Bach:
কক্সবাজার জিরো পয়েন্ট থেকে ইনানী সমুদ্র সৈকত ২৩ কিলোমিটার এবং হিমছড়ি থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে ইনানী সমুদ্র সৈকত অবস্থিত। ইনানী সমুদ্র সৈকতে ভাটার সময় অনেক পাথরের দেখা মিলে যেমনটা সেন্টমার্টিনে দেখা যায়। ইনানী বীচের নারিকেল গাছ, সমুদ্র তীরে সাম্পান, সারিবদ্ধ ঝাউবন গাছ ও এর প্রকৃতি আপনার মনকে প্রফুল্ল করে তুলবে।
⇒ ইনানী সমুদ্র সৈকতযেভাবে যাবেন – Cox’s Bazar to inani Beach Distance:
কক্সবাজার থেকে মাত্র ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ইনানী বিচ ।কক্সবাজারের কলাতলী থেকে জিপে যেতে পারবেন ইনানী বিচে। আপনি চাইলে রিজার্ভেও যেতে পারেন অথবা লোকাল গুলোতেও যেতে পারেন। তবে গাড়িতে ওঠার আগে অবশ্যই ভাড়া জিজ্ঞেস করে দামাদামি করে নিবেন।
হিমছড়ি – Himchori Sea Beach:
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলায় হিমছড়ি অবস্থিত। কক্সবাজার জেলার পর্যটন কেন্দ্র গুলোর মধ্যে হিমছড়ি অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র। হিমছড়ি কক্সবাজার থেকে ১২কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। হিমছড়ির একপাশে বিস্তৃত সমুদ্র সৌকত ও অন্যপাশে সবুজ পাহাড় ।হিমছড়ির অন্যতম একটি আকর্ষণ হল জলপ্রপাত, যা দেখতে পর্যটকরা ভিড় জমায়। তবে বর্ষার সময় ছাড়া এই ঝর্ণায় পানি থাকে না অর্থাৎ শুষ্ক থাকে। হিমছড়ির প্রাকৃতিক পরিবেশ পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ।
হিমছড়ি যেভাবে যাবেন – Cox’s Bazar to Himchori Distance:
কক্সবাজার জিরো পয়েন্ট থেকে হিমছড়ির দূরত্ব ১২ কিলোমিটার। কক্সবাজার কলাতলী থেকে হিমছড়িতে যাওয়ার জন্য জিপ রয়েছে।আপনি হিমছড়ি যাওয়ার জন্য এই জীপ গুলো দিয়ে যেতে পারেন। লোকাল জীপ গুলো অথবা রিজার্ভ করে যেতে পারেন।হিমছড়ি ও ইনানী বীচ একসাথে ঘুরে আসতে পারেন সে ক্ষেত্রে রিজার্ভ ভাড়া দেড় হাজার টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া লাগতে পারে। আপনি যদি লোকাল জীব গুলোই যান তবে ৩০০ থেকে ৪০০টাকার মত গাড়ি ভাড়া লাগতে পারে ।
মহেশখালী দ্বীপ – Moheshkhali Sea Beach:
পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম একটি দ্বীপ হলো মহেশখালী দ্বীপ। বাংলাদেশের একমাত্র পার্বত্য দ্বীপ হলো মহেশখালী। মহেশখালী দ্বীপ পান ও লবণ ব্যবসার জন্য অন্যতম ।চিংড়ি, লবণ, পান, শুটকি ও মুক্তা উৎপাদনের দিক দিয়ে মহেশখালীর অনেক সুনাম রয়েছে। মহেশখালী দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যে কোন পর্যটককে ভ্রমণের তৃপ্তি মেটায়।
মহেশখালী দ্বীপ যেভাবে যাবেন – Cox’s Bazar to Moheshkhali :
কক্সবাজার শহর থেকে মহেশখালী যাবার জেটিতে ছয় নং ঘাট হতে ট্রলার বা স্পিডবোটে মহেশখালী আসতে পারবেন।আপনি চাইলে স্পিডবোট বা ট্রলার রিজার্ভ নিতে পারেন তবে লোকাল আসলে ৭০ থেকে ৮০ টাকায় আসা যায়। মহেশখালী এসে আপনি অটো রিক্সা বা বড় অটো গুলোতে ঘুরে সব কিছু দেখতে পারবেন।
রামু বৌদ্ধ বিহার – Ramu Buddha Bihar:
কক্সবাজার জেলার অন্যতম একটি উপজেলা রামু। রামুতে প্রায় ৩৫টি বৌদ্ধ মন্দির রয়েছে যা ঐতিহাসিক ও প্রাচীন দিকনির্দেশন। রামুর বৌদ্ধবিহার ও প্রাচীন নিদর্শনগুলো গৌরবময় সাক্ষ্য বহন করে। রামুতে বৌদ্ধ মন্দির গুলো ঘোরার মাধ্যমে আপনি আপনার ভ্রমণকে উপলব্ধি করতে পারবেন এবং অনেক অজানা তথ্য জানতে পারবেন। এখানে পর্যটকদের উপস্থিতি সারা বছর লক্ষ্য করা যায় ।
রামু বৌদ্ধ বিহারে যাওয়ার উপায়: কক্সবাজার থেকে অটো রিক্সা /ট্যাক্সি বা সিএনজিতে রামু যাওয়া যায়।রামু বৌদ্ধবিহার এ যাওয়ার জন্য অটো রিক্সা সাধারণত জনপ্রতি ৪০ টাকা ভাড়া নেই। আপনি যদি রিজার্ভ করে ঘুরতে যান তাহলে যাওয়া-আসা সব মিলিয়ে ৫০০ টাকার মতো ভাড়া লাগবে। আপনারা চাইলে ৫-৬ জন অনায়াসে অটো রিক্সায় ভ্রমণ করতে পারবেন।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ – Sentmartin Sea Beach:
বাংলাদেশের দক্ষিণের বঙ্গোপসাগরের উত্তর পূর্বাংশ নিয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপ অবস্থিত। এই দিনটিকে প্রবাল দ্বীপ বলা হয় যা টেকনাফ থেকে নয় কিলোমিটার দক্ষিনে এবং মিয়ানমার উপকূল হতে প্রায় ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। সেন্টমার্টিন দ্বীপ নাফ নদীর গা ঘেঁষে এর অবস্থান।সেন্ট মার্টিনে প্রবাল, শামুক, ঝিনুক, সামুদ্রিক শৈবাল, গুপ্তজীবী উদ্ভিদ, সামুদ্রিক মাছ ও বিভিন্ন প্রজাতি পাখি রয়েছে যা পর্যটকদের দৃষ্টিনন্দন করে তোলে।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ যেভাবে যাবেন – Cox’s Bazar to Sant Martin:
সেন্টমার্টিন যাওয়ার জন্য প্রথমে কক্সবাজার জেলার টেকনাফে যেতে হবে। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যেতে প্রায় দুই ঘণ্টার মতো সময় লাগে। টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে প্রতিদিন সকাল থেকে অনেকগুলো জাহাজ আসা-যাওয়া করে এছাড়াও এই রোডে ট্রলার চলাচল করে। সেন্ট মার্টিনে যাওয়ার জন্য অবশ্যই জাহাজ ও ট্রলারের চলাচলের সময় গুলো জেনে রাখা ভালো।
পর্যটকদের আকর্ষণ – Cox’s Bazar Tourism Statistics:
প্রতিবছর পর্যটন মৌসুমে কক্সবাজার শহরে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা যায়। সুইজারল্যান্ডের “New Seven Wonders Foundation” এর উদ্যোগে ২০০০ সালে কক্সবাজার সৈকত নতুন সপ্তাশ্চার্যের নির্বাচনে বেশ কয়েকবার শীর্ষস্থানে ছিল। যদিও প্রচারণার অভাবে এটি শীর্ষ স্থান ধরে রাখতে পারেনি। তবে সৈকতের সৌন্দর্য আজও অটুট রয়েছে।
ধর্মীয় উৎসব – Religiosity :
শারদীয় দুর্গাপূজার সময় লাখো পূজারী সমুদ্র সৈকতে প্রতিমা বিসর্জন দিতে আসে। এছাড়া, বর্ষাকালে রাখাইন সম্প্রদায়ের পিকনিক আয়োজনও সৈকতের একটি দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য।
সংস্কার এবং উন্নয়ন – About Cox’s Bazar:
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যময় পরিবেশের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। পর্যটকদের জন্য নিরাপত্তা এবং সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে এর আকর্ষণ বাড়ানো হচ্ছে। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন ও স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। পুরনো ঝিনুক মার্কেট ভেঙে আধুনিক ঝিনুক মার্কেট নির্মাণ, বীচ গার্ডেন কাম পার্ক এবং পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ এর মধ্যে অন্যতম।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা – Security in Cox’s bazar:
পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য বীচ পুলিশ সংযোজন করা হয়েছে। এছাড়া, ইয়াসীর লাইফ গার্ড এবং ওয়াচ বে লাইফ গার্ড দল অনেক পর্যটকের জীবন রক্ষা করেছে।
হোটেল বুকিং – Cox’s Bazar Hotel Booking :
কক্সবাজার হোটেল বুকিং করতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা আপনাকে আপনার চাহিদা অনুযায়ী ও আপনার বাজেট অনুযায়ী মানসম্মত এবং ভালো হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করে দিব। অগ্রিম হোটেল বুকিং এর জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে admin@travelwayinfo.com যোগাযোগ করুন।
সতর্কতা:
- সমুদ্র সৈকতে নামার আগে অবশ্যই জোয়ার ভাটার সময় জেনে নিবেন।
- হাটু পানির নিচে নামবেন না।
- উত্তেজনার বসে তীর থেকে বেশি দূরে যাবেন না।
- ছোট বাচ্চাদের নিয়ে পানিতে না নামাই উত্তম।
- সাঁতার কাটা না জানলে ভুল করেও বেশি পানিতে নামবেন না।
- নৌযান চলাচলের সময় অবশ্যই লাইভ জ্যাকেট পরিধান করবেন।
Leave a Reply