সিলেটের দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে অন্যতম কিছু স্থান হলো চা বাগান, জাফলং, ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর, রাতারগুল জলাবন , লালাখাল, হাকালুকি হাওর ইত্যাদি। সিলেট প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভরপুর। সিলেট বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রাচীন জনপদ, যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। এ অঞ্চলটি পাহাড়, টিলা, চা-বাগান, নদী এবং হাওরের সমন্বয়ে গঠিত। যা পর্যটকদের দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় করে তুলে।
সিলেটের দর্শনীয় স্থান সমূহ (Top 10 tourist place in Sylhet) :
বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সিলেট জেলা। সিলেট সৌন্দর্যের নীলাভূমি। সিলেটের যেকোনো পর্যটন কেন্দ্রে আপনি প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। সিলেটের কিছু পর্যটন কেন্দ্রের সঠিক তথ্য নিচে বিস্তারিত সহ আপনাদের মাঝে তুলে ধরা হলো।
জাফলং (Jaflong) :
সিলেটের দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে অসম্ভব সুন্দর একটি স্থান জাফলং। প্রকৃতি কন্যা নামে সারাদেশে পরিচিত সিলেটের এই জনপ্রিয় স্থান জাফলং,যা মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। পিয়াইন নদীর তীরে বিছানো স্তরে স্তরে পাথরের স্তুপ জাফলং কে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। জাফলং এ বর্ষাও শীত মৌসুমের সৌন্দর্যের রূপ ভিন্ন ভিন্ন।কয়েক হাজার ফুট উঁচু থেকে নেমে আসা ঝর্ণার দৃশ্য যে কারোরই নয়ন জুড়ায়। সিলেটে আসলে জাফলং এসে অবশ্যই ঘুরে যাবেন। জাফলং এর প্রকৃতি আপনাকে মুগ্ধ করে তুলবেই।
⇒ জাফলং এর অবস্থান (Location of Jaflong) :
সিলেট শহর থেকে জাফলং এর দূরত্ব প্রায় ৬২ কিলোমিটার। সিলেটের উত্তর-পূর্ব দিকে গোয়াইনঘাট উপজেলায় জাফলং এর অবস্থান।
⇒ জাফলং ডাউকি পাহাড় ও ঝুলন্ত ডাউকি ব্রিজ (Dawki border bangladesh)
সীমান্তের ওপারেই দেখা যায় ইন্ডিয়ান পাহাড় টিলা। ডাউকি পাহাড় থেকে অবিরাম ধারায় প্রবাহমান জলপ্রপাত, আছে ঝুলন্ত ডাউকি ব্রিজ। পিয়ান নদীর স্বচ্ছ পানি, পাহাড়ের গহীন অরণ্য ও শুনশান নীরবতা। এখানে পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ জল, পাথর সংগ্রহ এবং চা-বাগানের সৌন্দর্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে তুলে।
⇒ জাফলং যেভাবে যাবেন (Sylhet to Jaflong) :
সিলেট জেলা শহর হতে সড়ক পথে দূরত্ব মাত্র ৫৬ কিলোমিটার। সিলেট থেকে সিএনজি, বাস/মাইক্রোবাস/ অটো রিক্সায় ,যেতে পারেন জাফলং। সিলেট থেকে জাফলং যাওয়ার জন্য বাসে জনপ্রতি ৫৫ টাকা, মাইক্রোবাসে ২০০০ হাজার থেকে ২৫০০ টাকা, সিএনজি চালিত অটো রিক্সায় ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা খরচ পড়বে। এখানে যেতে এক থেকে দেড় ঘন্টা সময় লাগতে পারে।
⇒ জাফলং থাকার ব্যবস্থা (Jaflong Hotel ) : জাফলং থাকার খুব ভালো উন্নত মানের কোন ব্যবস্থা নেই। যে কয়েকটি ব্যবস্থা আছে তার মধ্যে জেলা পরিষদের নলজুরি রেস্ট হাউস (তবে সেখানে থাকতে হলে অবশ্যই আগে অনুমতি নিতে হবে) শ্রীপুর পিকনিক স্পট উল্লেখযোগ্য, কিছু বোর্ডিংয়ে থাকার ব্যবস্থা আছে। এছাড়াও শ্রীপুর ফরেস্ট এর বাংলো আছে পর্যটকদের থাকার জন্য।
ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর (Bholagonj Sada Pathor) :
ভোলাগঞ্জ সিলেট উপজেলার সীমান্তবর্তী একটি পাথর কোরিয়া। সাদা পাথর নামে ভোলাগঞ্জ পরিচিত। বর্তমানে পর্যটন প্রেমিকদের জন্য এটি একটি পর্যটন স্থান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এখানে মেঘালয়ের সবুজ পাহাড়, মেঘালয় থেকে নেমে আশা পাহাড়ি ঝরনা এবং পাশে পাথরের নদী জায়গাটির সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। মেঘালয়ে ঝরনা গুলো থেকে যে নদীর উৎপত্তি হয়ে ভোলাগঞ্জ এর মধ্য দিয়ে গেছে তার নাম ধলাই নদ। ঝর্নার পানি স্রোতে এই পাহাড় থেকে নদী বেয়ে নেমে আসে সাদা পাথর। এখানে গেলে আরো দুইটি সুন্দর জায়গা পাবেন উৎমাছড়া ও তুরুংছড়া নামে।
⇒ ভোলাগঞ্জ যেভাবে যাবেন (Sylhet to Bholaganj Sada pathor:
সিলেটের আম্বরখানা ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর যাওয়ার জন্য সিএনজি পাবেন। সেখানে লোকাল সিএনজিতে জনপ্রতি ১৫০ থেকে টাকা নিবে ১৭০ টাকা পর্যন্ত নিবে। আম্বরখানা থেকে ভোলাগঞ্জ যেতে প্রায় দেড় ঘন্টা সময় লাগে। আপনি চাইলে সিএনজি রিজার্ভ নিতে পারেন। ভাড়া ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা হতে পারে। সিএনজিতে পাঁচজন যেতে পারবেন। ভোলাগঞ্জ বাজারে আসার পর ১০ নাম্বার নৌকা ঘাটে যেতে হয়। নৌকা ঘাট থেকে ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর যেতে পারবেন। যাওয়া এবং আসার জন্য নৌকা ভাড়া পড়বে ৮০০ টাকা। এক নৌকায় ১০ জন পর্যন্ত যাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে নিজেরা যদি গ্রুপ করে যান তাহলে আপনারদের খরচ অনেকটা কমে যাবে।
রাতারগুল জলাবন (Ratargul swamp Forest):
এটি বাংলাদেশের একমাত্র স্বীকৃত সোয়াম্প ফরেস্ট বা জলাবন, যা সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত।রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট এর সৌন্দর্যে যে কেউ মুগ্ধ হয়ে যাবেন। সারি সারি হিজল গাছ ডুবে আছে পানিতে তার ভিতর দিয়ে নৌকায় চলাচল করার আনন্দ উপভোগ করার মত। বৈঠা নৌকা দিয়ে বনে প্রবেশ করতে হয়। ইঞ্জিন চালিত নৌকা প্রবেশ নিষেধ। বর্ষাকালে নৌকায় করে এই বনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এখানে আপনি বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখতে পারবেন। যেহেতু এখানে অনেক প্রজাতির পাখি রয়েছে তাই কোন অপচনশীল দ্রব্য পানিতে নিক্ষেপ করবেন না। বনের ভিতরে একটি ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে এই ওয়াচ টাওয়ারে উঠে আপনি চাইলে বনটাকে পাখির চোখে দেখতে পারেন।
⇒ রাতারগুল জলাবন যেভাবে যাবেন (Location of Ratargul swamp forest from sylhet) :
সিলেটের যেকোনো জায়গা থেকে মোটরঘাট পর্যন্ত সিএনজি নিয়ে আসবেন। মোটরঘাট থেকে নৌকা ভাড়া করে যাবেন। প্রতি নৌকা ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা ভাড়া নেই ,এবং এই নৌকায় চার জন পর্যন্ত বসা যায়।
বিছানাকান্দি (Bichanakandi) :
গোয়াইনঘাট উপজেলায় মেঘালয়ের সীমান্তবর্তী স্থানে অবস্থিত বিছানাকান্দি। বিছানাকান্দি মূলত একটি পাথরের কোয়ারি। নৌকা দিয়ে হাদার পাড় থেকে বিছানাকান্দি যাওয়ার পথটাও অসম্ভব সুন্দর। পথের দু’পাশে সবুজের ছড়াছড়ি, তবে যেখানে পাথর নেই। সেখানে নদী বেশ খরস্রোতা তাই একটু সাবধানে থাকবেন।
⇒ বিছানাকান্দি যেভাবে যাবেন (Sylhet to Bichanakandi) :
বিছানাকান্দি যাওয়ার রাস্তা খুব বেশি একটা ভালো না। ভালো হয় আম্বর খানা থেকে সিএনজি নিয়ে গেলে। প্রতি সিএনজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা নেবে হাদার পার পর্যন্ত। সেখানে গিয়ে নৌকা ভাড়া করবেন। নৌকায় সর্বোচ্চ ১০ জনের মত যেতে পারবেন।
লালাখাল ( Lalakhal ) :
সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় অবস্থিত লালাখাল। নদী তার নীল জলরাশির জন্য পরিচিত। স্বচ্ছ নীল জলরাশি দুই ধারে অসম্ভব সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং অপূর্ব সৌন্দর্যময় স্থান হলো লালাখাল। দীর্ঘ নৌপথের ভ্রমণের স্বাদ যেকোনো পর্যটক এর কাছেই অসম্ভব ভালো লাগবে। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের স্থান হলো লালাখাল। সেই সাথে রাতে লালাখালের সৌন্দর্য দ্বিগুণ বেড়ে যায়। ভারতের চেরাপুঞ্জীর ঠিক নিচেই লালাখাল এর অবস্থান। চেরাপুঞ্জি পাহাড় থেকে এই নদী উৎপন্ন এবং বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। নৌকাভ্রমণের মাধ্যমে এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
⇒ লালাখাল যেভাবে যাবেন ( Sylhet to Lalakhal ):
সিলেট শহর থেকে লালাখাল এর দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। বাস /মাইক্রো/ টেম্পু এই যানবাহন গুলোর মাধ্যমে আপনি যেতে পারবেন। লালাখাল থাকার তেমন কোন ভালো সুযোগ সুবিধা নেই। দিনের বেলায় ঘুরে আবার সন্ধ্যা হতেই সিলেট শহরে চলে যায় পর্যটকরা। শহরের হোটেলে রাত্রি যাপন করে। আপনিও চাইলে সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যার সময় সিলেট শহরে চলে যেতে পারে।
হাকালুকি হাওর ( Hakaluki Haor ) :
এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম হাওর, যা সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলায় বিস্তৃত। হাকালুকি হাওর মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা (৪০%), কুলাউড়া (৩০%), সিলেট জেলা ফেনসুগঞ্জ (১৫%), গোপালগঞ্জ (১০%) এবং বিয়ানীবাজার (০৫%) জুড়ে বিস্তৃত। এর আয়তন ১৮হাজার ১১৫ হেক্টর। শুধু বিলের আয়তন ৪ হাজার ৪০০ হেক্টর ।ভূ-তাত্ত্বিকভাবে এর অবস্থান উত্তরে ভারত মেঘালয় পাহাড় এবং পূর্বে ত্রিপুরা পাহাড়ের কাছে। এই হাওড়ে প্রায় ৮৫ থেকে ৯০ টি ছোট, বড় ও মাঝারি বিল আছে। শীতকালে এখানে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির আগমন ঘটে, যা পাখি প্রেমীদের জন্য আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন। সিলেটের দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে হাকালুকি হাওর অন্যতম একটি জায়গা
⇒ হাকালুকি হাওর যেভাবে যাবেন (Hakaluki Haor Location) :
সিলেট শহর থেকে বাস, অটো রিক্সা, যেকোনো যানবাহনে যেতে পারবেন। আপনি যেকোন যানবাহনে ফেঞ্চুগঞ্জ বাজার পর্যন্ত যেতে পারবেন । সেখান থেকে নৌকা ভাড়া করে হাকালুকি হাওরে ঘুরতে পারবেন। বড় গ্রুপের জন্য ১০ থেকে ১৫ জনের জন্য একটি ছাইওয়ালা ট্রলার ভাড়া করতে পারবেন। তারা সাধারণত দিন প্রতি ৩০০০ হাজার থেকে ৪০০০ হাজার টাকা নিয়ে থাকে।
⇒ হালাকুলি হাওরে থাকার ব্যবস্থা (Hotel in Sylhet) :
এই হাওরে রাতে থাকার ভালো কোন ব্যবস্থা নেই, তাই আপনি আপনার ভ্রমণ শেষে সিলেট শহরে ফিরে আসবেন। সিলেট শহরে সব ধরনের হোটেল রয়েছে। আপনি সেখানে থাকতে পারবেন ।
সতর্কতা :
বর্ষার সময় পর্যটনের বেশিরভাগ গন্তব্যে পানি থাকবে। তাই সাতার না জানলে সঙ্গে লাইভ জ্যাকেট আনবেন। এছাড়াও বৃষ্টি থেকে বাঁচতে রেইনকোট, ছাতা সব সময় সঙ্গে রাখবেন। প্রয়োজনে ড্রাইব্যাগ ও জিপলক ব্যাগ ব্যবহার করতে পারেন ।
- আপনার ভ্রমণ কে সুন্দর করে তুলতে এবং সঠিক ভ্রমণ তথ্য পেতে Travel Way Info সাথে যুক্ত থাকুন।
Leave a Reply